Header Border

ঢাকা, শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৯.৯৬°সে

ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্টের ৩ বছর পদার্পণ

সময়টা ২০১৯ সালের জুলাই মাস। বাইরে প্রচণ্ড গরম। তাজুল ইসলাম এলো আমার বাসায়। দেখা করতে। পরেরদিন ফ্ কয়েকটা দেশে। ঘুরতে নয়, কাজের প্রয়োজনে। অনুরোধ করলাম কিছু গিফট আইটেম করে দিতে। তাজুল রাত জেগে ওগুলো তৈরী করিয়ে পরেরদিন নিয়ে এলো।

তাজুলের সাথে আমার প্রথম দেখা ২০১০ সালে। জোনাকী সিনেমা হলের উল্টো দিকে একটা রেষ্টুরেন্টে। এরপর তাজুল জড়িয়ে পড়লো আমার সাথে। আমাদের কাকরাইলের অফিসে চিত্রনাট্য, গল্প কিংবা গানের কথা-সুর, এসব নিয়েই দিন কাটতে লাগলো। মিডিয়ার প্রতি আমার আগ্রহ থাকলেও ততোদিন বড়কিছুতে হাত দেয়ার উচ্ছাস হারিয়ে ফেলেছি। কারণ, ২০০৭ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম দিনেই বিজয় নগর এলাকায় প্রায় তিন হাজার বর্গফুটের সাজানো-গোছানো অফিস থেকে ক্রাউন মিউজিক-এর যাত্রা শুরু হলেও দু’বছরের মাথায় বুঝলাম, টিম নির্বাচনে আমি ভুল করে ফেলেছি। বড় অংকের টাকা গচ্চা দেয়ার পর ক্রাউন মিউজিকের ঠিকানা হলো পাটুয়াটুলি এলাকার মুন কমপ্লেক্সে। অডিও কোম্পানীর শোরুম তখন ওই এলাকাতেই। আমার পক্ষে তখন ওই ধরনের একটা শোরুমে বসা অসম্ভব। একারণেই কাকরাইলে আরেকটা অফিস নেয়া। টানা দু’বছর কাকরাইলের অফিস থাকলো। পাটুয়াটুলি এলাকায় ক্রাউন মিউজিকের শোরুম ২০১৩ অব্দি। কিন্তু অর্জন নেই একদম। শুধুই প্রতিমাসে লাখলাখ টাকা গচ্চা। এরমাঝেই ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুলাই, এই সময়টায় আমি লোকালয়ের অন্তরালে।

তাজুল অবশ্য ২০১০ সালে আমার সাথে যুক্ত হলেও মাত্র কয়েক মাস পরই হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো, উদ্ভট এক ভাবনার হাতছানিতে। আবেগের বশে বাস্তবতা ভাবেনি। তখন অবশ্য ওর বয়সও অনেক কম।

দিন পনেরো পর আমি বিদেশ থেকে ফিরে এসেই এবার তাজুল ফোন দিলাম। সে এলো। মাঝেমাঝেই আমরা চলে যাই মালিবাগ কিংবা নিকেতন এলাকায় স্টুডিওতে শিফট ভাড়া নিয়ে গান তৈরী করতে। কিন্তু কোনো ষ্টুডিওতেই ক্লায়েন্টের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রাইভেসী নেই একদম। ষ্টুডিও মালিকদের আচরণ অনেকটাই সামন্তবাদী জমিদারদের মতো। কাজের সময় যখন-তখন ঢুকে পড়ে। কাজে বিঘ্ন ঘটায়। আমার মেজাজ গরম হয়। একদিন নিকেতন এলাকার একটা ষ্টুডিওতে কাজ করার সময় ওমন ফালতু বিরক্তিতে আমি ক্ষেপে যাই। তাজুল তখনই বলে, আমাদের নিজেদের ষ্টুডিও লাগবে। কিন্তু আমার মাঝে তখনও মিউজিক কোম্পানী নিয়ে আগ্রহ একেবারেই অল্প। ষ্টুডিও করে কি হবে! এমন প্রশ্নের উত্তরে তাজুল বলে বসলো, আমরা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান করবো। নাটক-সিনেমা বানাবো। সাথে মিউজিক কোম্পানীটাও চলবে।

মগজে তাজুলের কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগলো। যদিও তখন অব্দি আমি নাটকের ‘ন’-ও বুঝিনা। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসেই হুট করে একদিন তাজুলকে কল দিলাম। বাসায় আসতে বললাম। সে এলো বিকেল ৩ টার দিকে। ওর হাতে কাগজ-কলম ধরিয়ে দিয়ে বললাম, মিডিয়া কোম্পানীর বাজেট করতে। এবার সে নিজেই পড়ে গেলো দ্বিধাদ্বন্দ্বে। কারণ, মিডিয়ায় তখন টাকা খাটানো মানেই বিরাট ঝুঁকি। তবু ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোলাচলে আর আমার চাপে পড়ে কাগজের বুকে কলম চালাতে লাগলো। কয়েক ঘন্টা পর বিনিয়োগের যে অংকটা দাড়ালো, সেটা দেখে তাজুল নিজেই যেনো ভুত দেখার মতো আঁতকে উঠলো। বিনয়ের সুরে বললো, এতো টাকা খাটানো উচিত হবেনা। আমিতো নাছোড়বান্দা। শেষতক তাজুল অনেকটা বাধ্য হয়েই সম্মতি দিলো। কিন্তু ততক্ষণে ওর মনে ধারণা জন্মে গেছে, রাত পোহালেই হয়তো আমার এই পাগলামী চলে যাবে। মিডিয়া কোম্পানী হয়তো হবেনা।

প্রায় এক সপ্তাহ আমার দিক থেকে আর কোনো উত্তর নেই। তাজুল ফোন দিলে ভিন্ন বিষয়ে কথা বলি। মিডিয়া কোম্পানী নিয়ে আর কিছু বলিনা। এক সময় তাজুল মনে হয় বুঝে গেলো, আমার মাথা থেকে মিডিয়া কোম্পানীর চিন্তা উবে গেছে। কিন্তু তাজুলের ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো যখন রাত প্রায় আটটায় কল দিয়ে বললাম, তুই কই? ও তখন এফডিসিতে আড্ডায় মগ্ন। বললাম উত্তরায় দিকে একটা দৌঁড় দে (এই দৌঁড় দে শব্দটা আমার অলমোস্ট কপিরাইট সংলাপ)। রাত নয়টার কিছু আগে তাজুল এলো। বললাম কাল থেকে অফিস খুঁজতে শুরু কর। ওর আইডিয়ায় তখন মগবাজার মিডিয়া গলি কিংবা এর আশপাশ। আমি বললাম, নিকেতন এলাকায় দেখ। যদিও তখনও নিকেতন এলাকায় মিডিয়া কোম্পানী একেবারেই হাতেগোনা।

জানুয়ারী ১, ২০২০ যখন নিকেতন এলাকায় ক্রাউন অফিসের যাত্রা শুরু হলো, তখন মিডিয়ার অনেকেই বললো, এলাকাটা মিডিয়ার লোকদের জন্যে দূরে হয়ে গেছে। মগবাজার কিংবা রামপুরায় হলে ভালো হতো। ক্রাউন এর ষ্টুডিওতে কাজকর্ম আসেনা। এমনকি কোনো মিউজিক ডিরেক্টর কিংবা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে রাজী করানো যায়না এখানে এসে কাজ করতে। সবাই বলে, লোকেশনটা ভুল। কয়েকজন মিউজিক ডিরেক্টরকে প্রায় অনুনয়-বিনয় করে বললাম ষ্টুডিওটার দায়িত্ব নিতে। কিন্তু সবাই নানা অজুহাতে এড়িয়ে গেলো। ঠিক ওই সময়টায় রানা আকন্দ সম্ভবত ওর জীবনের সবচাইতে বড় ঝুঁকিটা নিলো। কাকরাইল এলাকায় চালু একটা ষ্টুডিওর চাকরী ছেড়ে দিয়ে সে ক্রাউন ডিজিট্যাল ল্যাব ষ্টুডিওর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলো। প্রথম কয়েকমাস কাজকর্ম একেবারেই নেই। নিজেরাই ষ্টুডিওতে বসে গান তৈরী করি অথবা গান শুনি। অন্যদিকে ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট এর কাজ টরেটক্কা করে শুরু হলো। সেখানেও কাজে গতি আসছেনা। যে ক’জন নির্মাতা এলো, ওদের বেশিরভাগই মিডিয়ায় নামকরা ধুরন্ধর

প্রায় ছয় মাস পর, অর্থাৎ ২০২০ সালে মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্টের কাজে গতি আসতে শুরু করলো। ষ্টুডিওতেও আসতে লাগলো কিছু কাজ। যদিও তখন সারা দেশ আক্রান্ত কোভিদ মহামারীর তাণ্ডবে। ওই সময়ে (ঈদুল আযহার ঠিক আগে) একদিন ইকবাল এসে হাজির। ইকবালের সাথে আমার সম্পর্ক ২০১০ সাল থেকে হলেও মাঝখানে বেশ অনেকগুলো বছরের একটা গ্যাপ। ক্রাউন অফিসে ইকবাল এলো অতিথি হয়ে। কিন্তু আমি তাকে আটকে দিলাম মোহিনী যাদু মন্ত্রবলে। এরপর ইকবালের আগ্রহেই জন্ম নিলো ক্রাউন ক্রিয়েশনস্। এজেন্সী ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা। এর বহু আগে থেকেই সাংবাদিক ইকবাল গল্পকার, চিত্রনাট্যকার এবং মিডিয়া এজেন্সী ব্যবসায়ী হিসেবে ভালো একটা অবস্থান গড়ে ফেলেছে।

এর পরের ঘটনা সবই ইতিহাস। দেখতে-দেখতে ক্রাউন প্রযোজিত কিংবা সংশ্লিষ্ট নাটকের সংখ্যা তরতর করে বাড়তে লাগলো। এক শ থেকে দু’শ, অতঃপর পাঁচ শ’র বেশী। ঠিক এই সময়ে আমরা খুবই সীমিত পরিসরে পালন করলাম ক্রাউন এর দু’বছর পূর্তি। অবশ্যই এ দিনটায় আমাদের মাঝে আনন্দ ছিলো, ভালোলাগা ছিলো, কিন্তু উচ্ছাস ছিলো না। কারণ, অভীষ্ট লক্ষ্য আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। আমাদের স্বপ্নের ক্যানভাসের সিংহভাগজুড়েই এখনও রঙ্গের স্পর্শ লাগেনি। এবার আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। আজ থেকে দশ কিংবা পনেরো বছর পর যখন ক্রাউন এর ১৭ কিংবা ১৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হবে, তখন হয়তো আমরা বলতে পারবো, আমাদের স্বপ্নের ক্যানভাসের অর্ধেকের বেশী অংশে রঙ লেগেছে।এর পরের ঘটনা সবই ইতিহাস। দেখতে-দেখতে ক্রাউন প্রযোজিত কিংবা সংশ্লিষ্ট নাটকের সংখ্যা তরতর করে বাড়তে লাগলো। এক শ থেকে দু’শ, অতঃপর পাঁচ শ’র বেশী। ঠিক এই সময়ে আমরা খুবই সীমিত পরিসরে পালন করলাম ক্রাউন এর দু’বছর পূর্তি। অবশ্যই এ দিনটায় আমাদের মাঝে আনন্দ ছিলো, ভালোলাগা ছিলো, কিন্তু উচ্ছাস ছিলো না। কারণ, অভীষ্ট লক্ষ্য আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। আমাদের স্বপ্নের ক্যানভাসের সিংহভাগজুড়েই এখনও রঙ্গের স্পর্শ লাগেনি। এবার আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। আজ থেকে দশ কিংবা পনেরো বছর পর যখন ক্রাউন এর ১৭ কিংবা ১৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হবে, তখন হয়তো আমরা বলতে পারবো, আমাদের স্বপ্নের ক্যানভাসের অর্ধেকের বেশী অংশে রঙ লেগেছে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

তানভীরের ‘মৌনতার মন ভাঙে না
মাহফুজ ইসলামের ‘কপাল’ নাটকে আলিফ-জারা মনি
দীপান্বিতা রায় পরিচালিত নাটক ‘বিপতে পড়ে বিয়ে’
বীরাঙ্গনা মায়ের ত্যাগের গল্প ‘বাংলার মা জননী’
ডিরেক্টরস গিল্ডের নতুন সভাপতি হিরা, সাধারণ সম্পাদক সাগর
শিল্পকলায় উদীচী’র নাটক “রাজনৈতিক হত্যা”

আরও খবর