গত ১৫ই নভেম্বর বাংলাদেশ, আমেরিকা, মালদ্বীপসহ বেশকিছু দেশে মুক্তি পেয়েছে অনন্য মামুন পরিচালিত ভারত বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা ‘দরদ’। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, সোনাল চৌহান, রাহুল দেব, পায়েল সরকার প্রমুখ। সিনেমাটি মুক্তির পর বেশ সাড়া ফেলে দর্শক মহলে।
তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় সিনেমাটির চিত্রনাট্য ও গল্পের গাথুনি নিয়ে। দর্শকদের মধ্যে এই মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও দরদের গল্পের গাথুনি নিয়ে মতামত দিয়েছেন সিনিয়র বিনোদন সাংবাদিক ইমরুল শাহেদ।
দরদ ছবি নিয়ে দর্শকের মতামত ভিন্ন ভিন্ন এবং এটাই স্বাভাবিক। কেউ বলছেন ছবির গল্প বুঝিনি, আবার কেউ বলছেন চমৎকার ছবি। আবার কেউবা ক্ষোভের সুরে বলছেন পরিচালক অনন্য মামুনের আর ছবি বানানো উচিত নয়। অনন্য মামুন এসব কথার জবাব না দিয়ে সম্প্রতি আয়োজন করেছিলেন একটি বিশেষ প্রদর্শনীর। তাতে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকসহ চলচ্চিত্রশিল্পের অনেকেই। তারাও সবাই একমত হতে পারেননি ছবিটি নিয়ে।
ছবিটি নিয়ে এতো কথা বলার কারণ হলো এটি একটি ব্যতিক্রমী ধারার চলচ্চিত্র। প্রত্যেক নির্মাতারই একটা নিজস্বতা আছে। অনন্য মামুনও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেউ নন। দরদ ছবিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে তার সেই ব্যতিক্রমী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া গেছে। এই ছবিটি একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকের, যার সঙ্গে এদেশের দর্শকের তেমন একটা পরিচয় নেই। যারা তামিল, তেলেগু, অসমিয়া বা হিন্দি ছবি দেখেন তাদের কাছে ছবিটি একটু সহজ বলেই মনে হবে। এই ছবিটি সাইকো থ্রিলার আঙ্গিকের। সুতরাং নির্মাণশৈলীতেও এসেছে ভিন্নতা। পুরো ছবিতেই রয়েছে নির্মাণের মুনশিয়ানা।
গল্পে দেখা যায় একটি ছেলে প্রথম দেখাতেই একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলে। মেয়েটি আবার একজন সেলেব্রিটির দারুণ ভক্ত। ছেলেটির কাছে কখনো কখনো মনে হয়, মেয়েটি তার চাইতেও বেশি ভালোবাসে সেলিব্রিটিকে। কিন্তু এ নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ ছেলেটি ছিলো মেয়েটির প্রতি ভালোবাসায় অবিচল, যার মানে এক কথায় বউ পাগল। কিন্তু ছবিটি শুরু হয় একটি খুনের দৃশ্য দিয়ে, কিন্তু কে খুন করে তা প্রথমে দেখানো হয় না। এরপর পুরো ছবিতে মেয়েটির প্রিয় সেলিব্রেটি সহ আরো ৩টি রহস্যজনক খুন হয় কিন্তু কে বা কারা এ খুনের সাথে জড়িত এবং কেন খুন করে তা নিয়েই মূলত ছবির গল্প।
চিত্রনাট্যের মজবুত গাথুনিতে বাস্তবতা এবং কল্পজগতের বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। দরদ ছবির আসল কারিশমা ও অভিনবত্ব এখানেই । এখানে উল্লেখ্য যে, মেয়েটিকে ছবির প্রায় শুরুতেই দেখানো হয় নদীতে ঝাপ দেয়ার একটি দৃশ্য, মেয়েটি মারা যায় নাকি বেঁচে ফিরে তা ছবির একটি বাঁক বলা যেতে পারে। যে দর্শক মনোযোগ দিয়ে ছবিটি দেখেছেন তার কাছে স্পষ্ট হবে ছেলেটির কল্পজগতও শুরু হয় এখান থেকে।
থ্রিলার ঘারানার গল্প এবং চিত্রনাট্যের অভিনবত্বের সঙ্গে সকল দর্শক বিচরণ করতে পারে না। সমস্যা দেখা দিয়েছে এখানেই। তারপরও আশা থাকলো, অনন্য মামুন দর্শকের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় বিমর্ষ না হয়ে তিনি তার অগ্রযাত্র অব্যাহত রাখবেন। ঋত্বিক কুমার ঘটক বলেছেন, নির্মাতা হিসেবে আমার কাজ ছবি বানানো। দর্শক দেখবেন কিনা সেটা তাদের ব্যাপার।