সোহাগ চৌধুরী। একাধারে একজন সাংবাদিক, টেলিভিশন প্রযোজক ও নির্মাতা। পড়াশোনা করেছেন লন্ডন থেকে। হঠাৎ করে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে (ইউকে)। কাজ করতে করতে এ সেক্টরের প্রতি তার আলাদা ভালোলাগা তৈরি হয়। এ মাধমে খুঁজে পান জীবনের উদ্দেশ্য। নিজেকে আরো দক্ষ করতে ক্যামেরা চালানো, রিপোর্টিং শিখেছেন। পাশাপাশি শুরু করেন অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পরিচালনা।
এর মাঝে ইউকের ১৬টি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি নিয়ে সম্পূর্ন নিজের প্ল্যানিংয়ে শুরু করেন ইন্টার কলেজ টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যা কিনা সেই সময়ে বহুল আলোচিত ইভেন্ট হিসেবে রুপ নেয়। কমিউনিটি অ্যাওয়ার্ড ও প্রশংসাপত্র পান তৎকালিন টাওয়ার হ্যামলেটস এর মেয়র ও ব্রিটেনের বাংলাদেশী হাইকমিশনারের কাছ থেকে।
নিজেকে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে পড়েছেন সাংবাদিকতায়। ইংল্যান্ডের এস এ ই ইন্সটিটিউটে থেকে ডিজিটাল জার্নালিসম ও টিভি প্রোডাকশনের উপর দুই বছরের ডিপ্লোমা করেন। ২০১০ সালে ইন্ডিয়ান মিউজিক ও এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল বি ফোর ইউ নেটওয়ার্ক লন্ডন অফিসে সহকারী প্রযোজক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই সুবাদে তার বলিউড কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। বলিউড লাউঞ্জ নামে একটি অনুষ্ঠান করেছেন।
যেখানে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খান, সালমান খান, সাইফ আলি খান, ইমরান খান, হৃতিক রোশান, জন আব্রাহাম, কারিনা কাপুর, এইশ্বরিয়া রায়, সোনাম কাপুর সহ অনেক বলিউড স্টাররা অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন।
সোহাগ নিউজজি’কে বলেন, বাংলাদেশের দেশ টিভি লন্ডনে অফিস ও স্টুডিও করার সিদ্ধান্ত নেয়। ডাক পরে আমার। বি ফোর ইউ ছেরে জয়েন করি। সেখানে এক বছর কাজ করি। রিপোর্টিং এর পাশাপাশি বিহান্ড দ্য রেষ্টুরেন্ট ইন্ডাষ্ট্রি, ভিউস অন নিউজ, লাইফ ইন দ্য ইউকে এর মতো অনেক গুলো জনপ্রিয় প্রোগ্রাম করি। এক বছর পর আবারো ফিরে যাই এনটিভি ইউরোপে। যোগ দেই প্রডিউসার ও অপারেশন্স ম্যানেজার হিসেবে! আমিই প্রথম বাংলাদেশী যে কিনা দু:সাহস করি ইউকের হাই প্রোফাইল ভেন্যু ০২ এরেনাতে লাইভ ইভেন্ট করার এবং প্রথম বাংলাদেশী একটা চ্যানেলের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করি। যেখানে তৎকালীন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের হেড, ব্রিটেনের এটর্নী জেনারেল, ব্রিটেনের বেশ কজন লোকাল এমপি, মেয়র ও বাংলাদেশের হাইমিশনার উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পারফর্ম করেছিল বলিউডের জনপ্রিয় ড্যান্স গ্রুপ বলিফ্লেক্স সহ বাংলাদেশী গায়ক গায়িকারা। পাশাপাশি ডেইলি নিউজ সহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান শুরু করি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে দেশে ফিরে যমুনা টিভির প্রোগ্রাম হেড সুপন রায়ের উৎসাহে যমুনা টিভিতে যোগ দেই। যেখানে শোবিজ টুনাইট নামে জনপ্রিয় ডেইলি এক অনুষ্ঠানে প্রযোজনা ও রিপোর্টিং শুরু করি। যা কিনা এখনো দেশের শোবিজ ইন্ডাষ্ট্রিতে শীর্ষস্থানীয় অনুষ্ঠান। পরবর্তীতে ভয়েস ও প্রবাসে প্রিয়জন নামে আরো দুইটি অনুষ্ঠান সফলতার সাথে শুরু করি। ২০১৮ সালে ৭১ টিভিতে যোগ দেই। সেখানে এখনও প্রোমোশনাল ও ব্র্যান্ডিং ডিপার্টমেন্টে দায়িত্বরত আছি।
সোহাগ বলেন, বিশেষ ইভেন্টসমূহ ও রাজনৈতিক, সমসাময়িক বিষয়, স্পোর্টস সহ সকল বিভাগের প্রমোশনাল কন্টেন্ট নির্মাণ ও প্রযোজনা করি। গত দেড় বছরে করোনা নিয়ে অসংখ্য কন্টেন্ট ও সচেতনতামূলক প্রমোশনাল নির্মাণ করেছি। পাশাপাশি ডাক্তারদের নিয়ে বিভিন্ন প্রমোশনাল কন্টেন্ট নির্মাণে রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হয়েও থেমে থাকিনি পুরোদমে কাজ চালিয়ে গেছি।
সোহাগ চৌধুরী নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু টিভিসি ও ডকুমেন্টরি। ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ওটিটি প্লাটফর্মে যথাযথ বাজেট পাওয়া যায় না আর পাওয়া গেলেও তার সঠিক ব্যবহার হয় না। কন্টেন্টের ঘাটতিও আছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তবে যথাযথ বাজেট নিশ্চিত হলে রিয়েল লাইফ কন্টেন্ট নিয়ে খুব শিগগিরই ওয়েব সিরিজ নিয়ে কাজ শুরু করবো। ইচ্ছে আছে দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান ও রিয়েলিটি শো নির্মাণ করার।