সময়টা ২০০৬ সাল। হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম অডিও প্রযোজনা কোম্পানী প্রতিষ্ঠার। বিজয় নগরে আড়াই হাজার বর্গফুটের অফিসে যাত্রা শুরু করলো ক্রাউন মিউজিক। সহযাত্রীদের মাঝে আলী আফতাব লনি, ওমর ফারুক, মাহবুব আর রহমান, আলী আহসান, আমানসহ আরো অনেকেই। ২০০৯ সালে ক্রাউন মিউজিক চলে গেলো পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলী এলাকায়। ওই সময়ে ওটাই অডিও কোম্পানিগুলোর মূল ঠিকানা। আর আমি কাকরাইলে আরেকটা অফিস নিয়ে বসলাম চলচ্চিত্র প্রযোজনার আশায়। সাথে তাজুল, কামরুল হাসান, রাকিবসহ সামান্য কজন সঙ্গী। ঠিক ওই সময়টায় ফিল্মে মন্দা চলছে। একারণেই আর চলচ্চিত্র নির্মাণ হলোনা। একারণেই আমার ব্যস্ততার বড় একটা অংশজুড়ে ইংরেজী পত্রিকা #ব্লিটজ। পুরানা পল্টনে তখন নিজেদের ছাপাখানা #ব্লিটজ_প্রিন্টার্স। এরপর ২০১২ থেকে ২০১৮ একটা দীর্ঘ বিরতী – অনিবার্য কারণে। ২০১৫ সালের দিকে ক্রাউন মিউজিক-এর পাটুয়াটুলী শোরুম বন্ধ করে দিতে হলো – অনিচ্ছা সত্বেও।
২০১২ সাল থেকে আমি যখন কারাগারে তখন আমার নিত্য সঙ্গী হাসান আর পরবর্তীতে মাসুদ এবং সানাউল্লাহ। প্রায়ই ফরিদ যেতো দেখা করতে। মাহবুব আর রহমানও যেতেন। একদিন ফরিদকে বললাম, এবার বের হয়ে মিডিয়ায় মনোযোগ দেবো। কথাগুলো শুনেই তার চোখেমুখে উচ্ছাস। কোনো স্বার্থে নয়। ফরিদ বরাবরই আমার সব কাজে উৎসাহ দেয়। ওই সময়টায় হাসান, মাসুদ এরা সবাই জানতো, আমি বের হবার পর নতুন একটা মিডিয়া কোম্পানী হবে। নাম ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট। তাজুল যখন পরিকল্পনাটা জানলো, তখন তার মাথায় এমন কিছু লোকের নাম, ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট এর সহযাত্রী হিসেবে, যাদের আসলে ন্যূনতম যোগ্যতাটাও নেই এতো বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার। তাজুল বরাবরই একটু সরল প্রকৃতির। সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে। একারণে জীবনে খেসারতও কম দেয়নি।
যাক, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের এক তারিখেই #ক্রাউন_এন্টারটেইনমেন্ট এর অফিসের কাজ শুরু হলো। এর কিছু আগে থেকেই #ক্রাউন_মিউজিক টুকটাক কাজ করতে লাগলো। ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট এর ডেপুটি সিইও হিসেবে কঠিন বোঝা মাথায় তুলে নিলো তাজুল। আমাদের টিমে যুক্ত হলো রানা মল্লিক, রানা আকন্দ, হোযায়ফা সোহেল, রাকিব, ফাজবির তাজ, রাসেল, কবির, মুন্নাসহ এক ডজনের বেশী সদস্য। আর ক্রাউন পরিবারের সবার ভালোবাসা অর্জন করলো আমাদের সবার প্রিয় খোকন। সার্বিক সহযোগিতা দিলেন সঙ্গীত পরিচালক ইরফান টিপু, আলী আফতাব লনি আর কাজী জামাল। আর আমাদের এই প্রয়াসে মন থেকে উদ্দীপনা দিতে লাগলো আমার প্রিয় বন্ধু, সঙ্গীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ। ওই সময়টায় মিডিয়ার অনেকেই যেমন আমায় ফোন করে অভিনন্দন জানাতেন একইভাবে কিছু লোক বলতে শুরু করলেন, “তাজুল ইসলাম চালাবে ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট? এই কোম্পানী ছয় মাসও টিকবেনা”। সমালোচকদের কথা শুনে আমি মনেমনে হাসতাম। কারণ আমি জানতাম এবং বিশ্বাস করতাম, তাজুলই পারবে। ২০২০ সালেই ক্রাউন পরিবারের সাথে গাঁটছড়া বাঁধলো আমার অনুজপ্রতিম সাংবাদিক সৈয়দ ইকবাল। তার কারণেই আরেকটা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলো। #ক্রাউন_ক্রিয়েশনস্। এর সামান্য আগেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছে #ক্রাউন_ডিজিট্যাল_ল্যাব নামের ষ্টুডিও আর #ক্রাউন_প্লাস ইউটিউব চ্যানেল।
মাঝখানে কোভিড এর কারণে ক্রাউন পরিবারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ ভুগতে হয়েছে। কিন্তু স্রষ্টার অসীম দয়ায় আমাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়নি।
স্রষ্টার দয়ায় ক্রাউন এখন বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। টেলিভিশন চ্যানেল এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুলোর জন্যে নাটক নির্মাণ, পরিবেশনা এবং বিপণনের সব শাখায় এখন ক্রাউন এর সরব পদচারণা। স্রষ্টার দয়া আর আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
যেদিন ক্রাউন যাত্রা শুরু করেছিলো, সেদিনই বলেছিলাম, আমরা ভালোবাসতে এসেছি, ভালোবাসা পেতে এসেছি। এটাই আমাদের মূলমন্ত্র। এটাই আমাদের মূল শক্তি। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে শক্তিশালী আর কিছুই নেই। এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
সবাই ভালো থাকবেন। ক্রাউন পরিবারের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর অশেষ ভালোবাসা।